Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ নদীমাতৃক বাংলাদেশে চরাঞ্চলের কৃষির সম্ভাবনা

প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ নদীমাতৃক বাংলাদেশে
চরাঞ্চলের কৃষির সম্ভাবনা
মুহাম্মদ মালেক হুসাইন
নদী ব্যবস্থা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। বৃহত্তর নদীগুলো চাষের জন্য জলের প্রধান উৎস এবং বাণিজ্যিক পরিবহনের প্রধান ধমনী হিসেবে কাজ করে। নদীগুলো মাছও সরবরাহ করে যা প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। যেহেতু জল কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মারাত্মক বন্যার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বর্ষাকালে নেট চাষযোগ্য জমির ৬০% এরও বেশি, প্রায় ৯১,০০০ বর্গকিলোমিটার (৩৫,০০০ বর্গ মাইল) চাষ করা হয় এবং প্রায় ৪০% জমি চাষ করা হয় শুষ্ক শীতের মাসগুলোতে।
চর অঞ্চল
বাংলাদেশের নদীর হাইড্রো-মরফোলজিক্যাল গতিশীলতার উপজাত হিসেবে অথবা নদীর তীরের মাটির ক্ষয় এবং বৃদ্ধি (ংড়রষ বৎড়ংরড়হ ধহফ ধপপৎবঃরড়হ) এর ফলে চর তৈরি হয়। চর দুই ধরনের হতে পারে যথা- দ্বীপ চর (রংষধহফ পযধৎং) ও সংযোগ চর (ধঃঃধপযবফ পযধৎং)। নদনদীর ভাঙাগড়ার প্রক্রিয়ায় নদীর প্রবাহখাতে দ্বীপচর হিসেবে অথবা নদীতীরে সংযুক্ত ভূভাগ হিসেবে বালুচর গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের চরগুলো অত্যধিক ক্ষয়কার্য এবং বন্যাপ্রবণ। স্যাটেলাইট ইমেজ বিশেষজ্ঞদের মতে প্রায় ৭৫% চর এক থেকে নয় বছর স্থায়ী এবং মাত্র ১০% চর আঠার বছর বা তার চেয়ে বেশি বছর স্থায়ী হয়। ধারাবাহিক উপগ্রহ চিত্রের একটি সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকার ৯৯ শতাংশেরও বেশি ভূমি ছিল চর। ১৯৭৩ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় একই বিশ্লেষণে আরও দেখা গিয়েছে যে, এ সকল চরের প্রায় ৭৫ ভাগই এক থেকে নয় বছরের মধ্যে বিলীন হয়ে গিয়েছে এবং প্রায় ১০ ভাগ চর আঠার বছর কিংবা তার অধিক সময়কাল পর্যন্ত টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছে। মূল ভূখন্ডের চেয়ে অস্থায়ী চর সাধারণত কম উৎপাদনশীল। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে অধিকাংশ চরের জমি আকস্মিক বন্যাকবলিত হয়ে ভেঙে, বালি মাটি দ্বারা ঢেকে বা ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। সীমিত ভূভাগের এ দেশে গড়ে ওঠা চরগুলো প্রায়ই নতুন বসতি স্থাপনের এবং নতুন কৃষিজমি তৈরির সুযোগ করে দেয়। এশিয়া ও নিকট প্রাচ্য অঞ্চলের জন্য সেচ সহায়তা প্রকল্প (ঞযব ওৎৎরমধঃরড়হ ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ চৎড়লবপঃ ভড়ৎ অংরধ ধহফ ঃযব ঘবধৎ ঊধংঃ-ওঝচঅঘ)- ইসপান নামক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান    কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে সকল চর তাদের উৎপত্তির প্রথম চার বছরে ক্ষয়প্রাপ্ত বা ভাঙনের শিকার হয় না, সে সকল চরে এ চার বছরের শেষদিকে কৃষিকাজ কিংবা বসতি স্থাপন শুরু করা যেতে পারে।
১৯৯৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে চরভূমির মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১,৭২২ বর্গ কিমি. বা ১,৭২,২০০ হেক্টর। দেশের ৭টি অঞ্চলের ৩১টি জেলায় মোট ১১০টি উপজেলায় প্রায় ১৬ শতাংশের ওপর এবং ১০৬টি উপজেলায় ৮-১৫ শতাংশের আংশিক চরাঞ্চল বিরাজমান। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট ভূমির প্রায় ১০ শতাংশ চর ভূমি বলে প্রতীয়মাণ এবং এর পরিমাণ প্রায় ৮ (আট) লাখ হেক্টর। বাংলাদেশের বৃহৎ চরাঞ্চলের মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, পাবনা, নাটোর, মাদারীপুর, বরিশাল ও ভোলা জেলার চর এলাকা। এ ছাড়াও রয়েছে মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার চর এলাকা।
চরের জনসংখ্যা ও বসতি  
১৯৮৪ সালের হিসেবের তুলনায় ১৯৯৩ সালে চরের জনসংখ্যা ৪৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯৩ সালের এক হিসেব অনুযায়ী চরসমূহের মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৬,৩১,০০০। এর বেশির ভাগই (প্রায় ৬৫ শতাংশ) যমুনা নদীর বিভিন্ন চরের অধিবাসী। একই সময়কালে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ছিল প্রায় ২৬ শতাংশ। এসকল হিসেব থেকে দেখা যাচ্ছে যে, মানব বসতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চরসমূহের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪% চরাঞ্চলে বসবাস করে যারা অত্যন্ত দরিদ্রপীড়িত। সে হিসেবে প্রায় ৬৪ লাখ মানুষ চরে বাস করে। তীব্র নদীভাঙন, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বেকারত্ব এসব মোকাবিলা করেই বছরের প্রায় পুরো সময়টা ধরে চরের মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়। ভৌগোলিক বিচার-বিশ্লেষণে চরাঞ্চল বাংলাদেশের উচ্চমাত্রার দারিদ্র্য প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।
চরের কৃষির সমস্যাসমূহ
কৃষিতে আমাদের বিরাট সাফল্য থাকলেও এটি সত্য যে চরের সব আবাদি জমি উৎপাদনের আওতায় এখনো আনা সম্ভব হয়নি। যদিও চর এলাকায় পর্যাপ্ত নদীর পানি ও ভূ-গর্ভস্থ পানি সহজলভ্য তবুও সেচ দিয়ে ফসল চাষ এর সুবিধা খুব কম এলাকায় রয়েছে। তাই দ্বীপচর এবং সংযুক্ত চরগুলি সংলগ্ন মূল ভূভাগ এলাকার তুলনায় কম উৎপাদনক্ষম; বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) রিপোর্ট অনুযায়ী, তুলনামূলকভাবে নদীর ভাটি অঞ্চলে সৃষ্ট চরগুলির মাটি অধিকতর উর্বর। কিন্তু যমুনা নদীর চরসমুহে শস্য নিবিড়তা অনেক কম। এখানে অনেক বড় এলাকা বিরানভূমি হিসেবে পতিত থাকে। যার কারনে উত্তরবঙ্গের জনগোষ্ঠী দারিদ্র ও মঙ্গাপীড়িত। অথচ উক্ত জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব; চরাঞ্চল উপযোগী আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি না থাকায় চরাঞ্চলে বিস্তীর্ণ ভূমির তুলনায় কৃষি উৎপাদন অনেক কম। এ ছাড়া চর এলাকায় ফসল উৎপাদন উপকরণ সহজলভ্য নয় এবং কৃষকের কারিগরী জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া চর এলাকার বিদ্যমান ফসল ধারায় ফসলের চাহিদা অনুযায়ী যৌক্তিক সুষম মাত্রার সার প্রয়োগ না করা, এলাকা উপযোগী উচ্চ ফলনশীল জাত ও উন্নত উৎপাদন কলাকৌশল ব্যবহার না করার ফলে             কৃষকেরা ফলন কম পাচ্ছেন; চরের শিক্ষাব্যবস্থা যথাযথ পরিমাণে না থাকায় অধিকাংশ চরবাসী নিরক্ষর। তাই তাদের সচেতনতা কম। উচ্চমাত্রায় দরিদ্রতা থাকায় অপুষ্টিজনিত নানা জটিলতায় ভুগে। এমনকি বিদ্যুৎব্যবস্থা না থাকায় আধুনিক ও যান্ত্রিক চাষাবাদ কৌশল প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
চরের চাষাবাদ বিস্তারে করণীয়
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের কৃষিতে দৃশ্যমান, যার কারনে কখনো অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, আবার বৃষ্টির সময়ে অনাবৃষ্টিতে খরা হচ্ছে। কাজেই আগামীর কৃষি খুবই চ্যালেঞ্জ প্রবণ। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় এবং দারিদ্র্যপীড়িত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে এই চরাঞ্চলের কৃষির উন্নয়ন করেত হবে, যেখানে রয়েছে মোট চাষজমির ১০ ভাগ। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় চরের জমি হলো ‘হিডেন ডায়মন্ড’। চরে যেমন হাজারো সমস্যা রয়েছে, তেমনি রয়েছে সম্ভাবনার শত দুয়ার। চর সংলগ্ন নদীতে সারাবছর পানি থাকে বলে চরে বসবাসকারী অনেক সম্প্রদায়ই বছরের বেশিরভাগ সময় মৎস্য আহরণে নিয়োজিত থাকে।
* বহু চরে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘাস জন্মায়। এ সকল তৃণভূমি গবাদিপশুর জন্য উত্তম চারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত করে মাংস উৎপাদনে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব; চরের কৃষি জমিতে অধিক উৎপাদন করতে হলে প্রথমেই দরকার উপযুক্ত ফসল ও তার জাত, সঠিক ফসলধারা ও এরপর সঠিক পরিচর্যা; ফসল ধারায় সুষম সার প্রয়োগ, এলাকা উপযোগী উচ্চফলনশীল জাত ও উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব; চরাঞ্চলের মাটির ধরন, জলবায়ু নিরিখে উপযোগী ফসলের বিস্তার ঘটিয়ে একটি টেকসই ও উপযোগী ফসলধারা প্রবর্তন করা যাতে কৃষকেরা দীর্ঘস্থায়ী ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করতে পারে। যেহেতু চরের নিম্নভূমি বর্ষাকালে প্লাবিত হয়। তাই সেই জমিতে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফসল করা সম্ভব হয় না। পানি দ্রুত সরে গেলে সেখানে মাসকলাই ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দরকার উপযুক্ত গবেষণা ও প্রযুক্তি জ্ঞান যা কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। চরাঞ্চল কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চরাঞ্চল উপযোগী ফসলের জাত উন্নয়ন এবং উন্নত চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে চরের কৃষিকে এগিয়ে নেয়া; চরাঞ্চলকে বিদ্যুতায়িত করার ব্যবস্থা গ্রহণ। সেক্ষেত্রে সোলার একটি উত্তম বিকল্প। তাই চরাঞ্চলে সোলারসেচ ব্যবস্থা প্রসার করা। সরকারের প্রকল্প গ্রহণ বা সহজ ঋণ ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে তা সম্প্রসারণ করা সম্ভব; চরাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার করা। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা; যেহেতু আমাদের দেশ একটি নিম্নভূমির বেসিন। তাই উজানের          নদ-নদীর ঝাটকাবান (ভষধংযভষড়ড়ফ) জনিত ফসলহানি রক্ষায় আবহাওয়া বিভাগের পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করা দরকার। ঝাটকাবান যেহেতু কম সময়ে অবস্থান করে তাই পর্যাপ্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকলে এর ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব।
সর্বপরি এ কথা বলা যায় যে, যে হারে সমভূমির চাষের জমি কমছে তাতে চরাঞ্চলের কৃষিকে এগিয়ে নেয়া খুবই জরুরি এবং অদূর ভবিষ্যতে চরাঞ্চল কৃষি জিডিপিতে বড় ভূমিকা রাখবে।   

লেখক : বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ডাল গবেষণা উপকেন্দ্র, বিএআরআই, গাজীপুর, মোবাইল নম্বর : ০১৯১৫৮৫৬৪০৪, ইমেইল- সসধষবশ০৮@ুধযড়ড়.পড়স


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon